৩.১.২.৪ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ সমূহ:
(ক) এসপারজিলোসিস (Aspergillosis)
এসপারজিলাস ফ্লেভাস নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট এ রোগকে এসপারজিলোসিস বলা হয়। মুরগির বাচ্চার ব্রুডিংকালীন সময়ে এ রোগ নিউমোনিয়া প্রকৃতির হয় বিধায় একে ব্রুডার নিউমোনিয়াও বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য বয়সের মুরগির আক্রান্ত হতে পারে। পুষ্টির অভাবজনিত কারণে দুর্বল মুরগি এবং ৰাজক মুরগি এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রুডিংকালীন সময়ে হলে ১০-৫০% মুরগি মারা যেতে পারে।
রোগের বিস্তার:
- হ্যাচারিতে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার পর বা ব্রুডার হাউজে ব্রুডিং এর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এই ছত্রাকের স্পোর ফুসফুসে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে।
- লিটার বেশি আর্দ্র হলে এই রোগের জীবাণু জন্ম নেয়। উক্ত স্পোর শ্বাসনালীতে যেরে রোগ সৃষ্টি করে ।
রোগের লক্ষণ:
- শ্বাসকষ্ট হয় ও হাঁ করে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে ।
- নিঃশ্বাসের সময় খড় খড় শব্দ হয়।
- খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দুর্বল হয়ে যায়।
- পিপাসা বেড়ে যাওয়ার ফলে বারবার পানি পান করে ।
- বাচ্চা মুরগিতে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারা যায় ।
- চোখে আক্রান্ত হলে চোখ ফুলে যায় ও চোখ দিয়ে সবসময় পানি পড়ে।
- মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে অবশ হওয়ার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না।
পোষ্টমর্টেম লক্ষণঃ
শ্বাসনালী, কণ্ঠনালী ও ফুসফুসে সাত দানার মত সাদা বা হলুদাভ নডিউল দেখা যায়। ফুসফুসে ধূসর বর্ণের ফেনা পাওয়া যায় ।
প্রতিরোধ
- হ্যাচারি যন্ত্র বাচ্চা ফোটানোর আগে ফিউমিগেশন করা উচিত। ছত্রাকমুক্ত ডিম বাচ্চা ফোটানোর আগে বেছে নিতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে বা বেশি শুকনা লিটার ব্যবহার করা উচিত না।
- বেশি দিনের পুরনো ছত্রাকযুক্ত খাদ্য খাওয়ানো যাবে না, খাদ্য উপাদান মেশানোর পর বেশি দিন রাখা যাবে না। ময়লা আবর্জনামুক্ত শুকনা পরিবেশ রাখতে হবে। খাবার পাত্র ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খাবারে নিয়মিত কপার সালফেট এবং মোল্ড বাইন্ডার যোগ করতে হবে।
চিকিৎসা:
কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই। মাইকোফিক্স প্লাস প্রতি কেজি খাদ্যে ১.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে । অথবা নিষ্টাটিন জাতীয় ঔষধ খাবারে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ।
(খ) আফলা-টক্সিকোসিস (Afla-toxicosis)
এটি মাইকোটক্সিন জনিত মারাত্মক রোগ। অ্যাসপাজিলাস নামক ছত্রাক থেকে এই মাইকোটক্সিন তৈরি হয় বা খাদ্যের মাধ্যমে বিশেষ করে সয়াবিন, ভূট্টা, চালের গুঁড়া ইত্যাদির মাধ্যমে খামারের মুরগিতে বিস্তার লাভ করে । নিম্নমানের খাদ্য (১৪% এর অধিক আর্দ্রতা), উপযুক্ত ভাবে গুদামজাত না করা, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ পোল্ট্রি খাদ্য মাইকোটক্সিন দ্বারা আক্রান্ত। সকল বয়সের মুরগি আক্রান্ত হতে পারে ।
রোগের বিস্তার:
- খাদ্য যদি কোনো কারণে ভিজে যায় এবং সেভাবেই সংরক্ষণ করা হয়।
- খাদ্য মেশানোর পর বেশি দিন রাখা হয় এবং তা যদি মুরগিকে খাওয়ানো হয়।
রোগের লক্ষণ:
- পালক ঠোকরাবে।
- পায়ের রং ফ্যাকাসে হবে ও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটবে।
- খাদ্যে অরুচি ও পাতলা পায়খানা হবে। মুখে ঘা দেখা দিবে ।
- পালক উসকো-খুসকো হবে।
- ঝিমাবে ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে।
- শরীরের ওজন কমে যায় ।
- পুষ্টি দ্রব্যের শোষণ হ্রাস পায় ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে ।
- পরবর্তীতে মুরগি মারা যাবে ।
পোস্টমর্টেম লক্ষণ: লিভার কালচে বর্ণের। চামড়ার নিচে রক্তের ফোঁটা। পেটের ভিতরে প্রচুর রক্ত পাওয়া যাবে।
প্রতিরোধ:
খাবারে টক্সিন বাইন্ডার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত লিটার ও খাবার পরিবর্তন করতে হবে। মাঝে মাঝে খাবারে অফলাটক্সিন-এর পরিমাণ জানার জন্য ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে হবে। লিটার শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। পঁচা, ভেজা ও নষ্ট খাবার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পরিষ্কার খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
চিকিৎসা:
- মাইকোফিক্স গ্লাস বা যেকোনো টক্সিন বাইন্ডার খাদ্যের মেশাতে হবে।
- পানিতে আখের গুড় ও কপার সালফেট মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
- পঁচা খাদ্য খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে ।
Read more